জনাই স্টেশন থেকে পনেরো কুড়ি মিনিট দূরত্বে এই রাজবাড়ী। রাজরাম চৌধুরীর হাত ধরে এখানে দুর্গাপুজোর সূত্রপাত হয়। মনে করা হয় চৌধুরীদের পূর্বপুরুষ বিষ্ণু চৌধুরী যশোরের মধুখালী থেকে হুগলিতে তাদের পারিবারিক কুলোদেবতা গোবিন্দ ও রাধা ঠাকুরানীর বিগ্রহ নিয়ে আসেন। এখানে দুর্গা প্রতিমা বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ। তিনি দশভুজার বদলে দেবী চতুর্ভূজা । মায়ের চার হাতে রয়েছে ঢাল, তলোয়ার, সাপ ও ত্রিশূল।ডাকের সাজে সজ্জিত একচালার এই মা দুর্গা মর্তে আসেন সপরিবারে । তবে গণেশ , কার্তিকের ওপরে জয়া বিজয়ার পরিবর্তে থাকেন গোবিন্দ ও রাধা ঠাকুরানি মূর্তি । আগে এখানে পশুবলি হতো। তবে রাধা গোবিন্দর নিত্য সেবা হওয়ায় এই প্রথা উঠে যায়।
বাড়ির প্রবেশ পথে অপূর্ব কারুকার্য প্রাচীনত্বের নজির আজও বহন করে আজও। বাড়ির বাইরেই বিরাট শান বাঁধানো পুকুর, যেখানে নবপত্রিকা স্নান করানো হয়। বাড়ির ভিতরে ঢুকে যা সর্বপ্রথম নজর কাড়বে তা হলো বিরাট দালান , এর একদিকে মন্দির ও ওপর দিক গুলিতে নাট মন্দির।এই নাটমন্দির দাড়িয়েই বাড়ির সদস্যরা পুজো দেখেন।
এখানে খুব বড় করে দোল উৎসব পালিত হয় । হিন্দুমুসলিম একসাথে দেবতার পায়ে এসে আবির দেয়। জন্মাষ্টমীর দিন থেকেই প্রতিমা নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যায়। আশ্চর্যের ব্যাপার মাকে এখানে রান্না করা ভোগ নিবেদন করা হয়না। সবটাই চাল,ফল ,মিষ্টি দিয়ে প্রস্তুত করা হয় নৈবেদ্য। তার পর সেই প্রসাদ সাধারণের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হয়। সপ্তমী ,অষ্টমী, নবমীতে কুমারী পুজো হয়।এছাড়াও পুজোর দিন গুলো তে এখানে বস্ত্র বিতরণ হয়। বর্তমান চৌধরী বাড়িতে নটি পরিবার আছে যেখানে বড় ,মেজো, ছোট কর্তারা আজও রয়েছেন। শুধু আশেপাশে নয় দূরদূরান্ত থেকে বহু দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে বাকসর এই রাজবাড়ীতে। পারিবারিক নিয়ম মেনেই সরস্বতী নদীতে মায়ের প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। এখানে মায়ের বিসর্জনের সময় আজও কোনো কৃত্রিম আলোর ব্যাবহার করা হয়না। কৃত্রিম আলোর পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় মশালের আলো । চৌধুরিবাড়ির এই প্রাচীন দুর্গাপূজার কথা অনেকের কাছেই অতটা পরিচিত না হলেও এই পুজোর মহিমা কিছু কম নয়। আগের থেকে পুজোর জৌলুস অনেকটাই কমে গেছে ঠিকই , তবে বর্তমান প্রজন্ম এই ঐতিহ্যকে আজও ধরে রেখেছে।