শিলা রাজবংশী : কল্পতরু কথাটি এসেছে পুরান থেকে । এটি হলো কল্পাত্নস্থায়ী বৃক্ষ । যার ফলে এই বৃক্ষের নিচে দাঁড়িয়ে কোন জিনিস প্রার্থনা করলে তা অচিরেই লাভ করা যায় । আমাদের এই ছোট্ট জীবনে চাওয়া পাওয়ার কোন শেষ নেই । নতুন বছরের এই দিনটিতে কল্পতরু ভগবানের কাছে জ্ঞান বৈরাগ্য ভক্তি বিশ্বাস চাওয়ার রীতি আছে । এতে করে জীবন হয়ে ওঠে আনন্দময় হাসিখুশি ও প্রানোবন্ধ ।
কল্পতরু উৎসবটি সাধারণত ১৮৮৬ সালের ১ লা জানুয়ারি সেই দিনটিকে স্মরণ করে ।
সেইদিন কি এমন ঘটেছিল যা স্মরণ করা হয় ?
তৎকালীন ১৮৮৬ সালের ১ লা জানুয়ারি কলকাতার কাশীপুর একটি বাগান বাড়ি যা আজ রামকৃষ্ণ ভক্ত পরিমণ্ডলে কাশীপুর উদ্যানবাটি নামে এক অন্যতম তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত ।
শ্রীরামকৃষ্ণের গলায় তখন ক্যান্সার হয়েছে , তখন তিনি ছিলেন দক্ষিণেশ্বরে । অনেক বড় বড় ডাক্তাররা পরীক্ষা করে বলেন তার বায়ু পরিবর্তন দরকার। যার কারনে তাকে তখন কলকাতার শ্যাম পুকুরের একটি বাড়িতে রাখা হয়। কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণের সেই বাড়িটি পছন্দ হয়নি । এরপর তাকে আনা হয় কাশীপুর একটি বাগান বাড়িতে । সেখানে তার যথারীতি চিকিৎসা চলতে থাকে ।
দিনটা ১৮৮৬ সালের ১ লা জানুয়ারি , বিকেল নাগাদ ঠাকুর দোতলার সিঁড়ি দিয়ে উদ্যানবাটির নিচের বাগানে নেমে আসেন । সেখানে তারা ৩০ জন গৃহীভক্ত ছিলেন। যাদের মধ্যে উল্লেখ্য ছিলেন বিখ্যাত নাট নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ ।
তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের নামে সমগ্র স্থানে তার অবতারত্ব প্রচার করে বেড়াতেন । তাই শ্রীরামকৃষ্ণ তাকে জিজ্ঞেস করেন " হ্যাঁ গো, তুমি যে আমার সম্পর্কে এত কিছু বলে বেড়াও আমাকে তুমি কি বুঝেছো ? " জবাবে গিরিশচন্দ্র ঘোষের নতজানু হয়ে বলেন " স্বয়ং ব্যাস বাল্মিকী যারা ইয়ত্তা করতে পারেনি আমি তার কি বলবো ? " তার কথা শুনে শ্রীরামকৃষ্ণ তখন ভাবসমাধী নেন । এবং তিনি বলেন " তোমাদের আর কি বলবো? তোমাদের চৈতন্য হোক "
ভক্তরা তখন তাকে ঘিরে ধরে এবং হাত করজোড়ে করে তার কাছে প্রার্থনা করে । তখন তাদের অন্তরে এক অদ্ভুত শান্তি পরিলক্ষিত হয় ।
শ্রী রামকৃষ্ণ মানব জীবনে চৈতন্যের বিকাশ জাগরণের জন্য কল্পতরু হয়েছিলেন ।
অর্থ নয় ,নাম নয় , যশ নয়, প্রতিপত্তি নয় প্রয়োজন চৈতন্যের ।
এছাড়াও কল্পতরু নিয়ে অনেক ইতিহাস বা শ্রুতিকথা রয়েছে
পুরান মতে দেবরাজ ইন্দ্রের স্বর্গদ্যানে এই গাছটি ছিল এবং এই গাছ থেকে যা চাওয়া হতো তাই পাওয়া যেত। এটি ছিল ইন্দ্রলোকের সর্ব মনস্কামনা পূরণকারী এক দেবতরু ।
এছাড়া শ্রী রামকৃষ্ণ অনেকবার নিজের ভক্তদের বলেছেন ভগবান কল্পতরু তার নিচে বসে যা প্রার্থনা করা হয় তাই পূরণ হয়।
কল্পতর উৎসবের এই দিনটিতে বেলুড় মঠে ভক্তের অগণিত ভির লক্ষ করা যায় । এইদিন বিভিন্ন স্থানে কামারপুকুর কাশীপুর দক্ষিণেশ্বর পূজাপাঠ , বৈদিক মন্ত্র, প্রসাদ বিতরণ ইত্যাদি আয়োজন করা হয় ।
একবিংশ শতাব্দীতে এসে চৈতন্যের বড্ড প্রয়োজন আছে । আসন্ন ধ্বংসের প্রতিপক্ষ দাঁড়াতে পারে মানবের চৈতন্য ।