শরৎকাল বললেই প্রথমে যে উৎসবের কথা মাথায় আসে তা হল বাঙালির অন্যতম উৎসব দুর্গাপুজো। এই উৎসবের জন্য প্রতিটা বাঙালি গোটা একটা বছর যাবত অপেক্ষা করে থাকেন। দুর্গাপুজো শুধুমাত্র বাঙালির একটি উৎসবের অংশ নয় দুর্গাপুজো হল সমস্ত বাঙালির আবেগ। তবে দুর্গা ঠাকুর বলতে সবার প্রথমেই যেটা মাথায় আসে তা হল মা দুর্গার দশভুজার রূপটি । কিন্তু মুর্শিদাবাদের এই রায়চৌধুরী জমিদার বাড়িতে মা দুর্গা পূজিত হন চতুর্ভূজা রূপে। এবং একটি নয় বরং তিনটি অর্থাৎ ত্রয়ী দুর্গার আরাধনা করা হয় এই জমিদার বাড়িতে। এই দুর্গাপুজোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তিনটি বেদীতে ত্রয়ী দুর্গার আরাধনা। জায়গাটি হল মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থানার পশলা গ্রাম।এই গ্রামেরই এক জমিদার বাড়ি রায়চৌধুরী জমিদার বাড়ি।
এখানেই দেখা মিলেছে মা দুর্গার এই ব্যতিক্রম রূপটির আরাধনা।রথের দিন দেবীর কাঠামোই মাটির প্রলেপ দিয়ে শুরু করে উমার বিসর্জন পর্যন্ত গ্রামের সকল মানুষ মেতে থাকেন এই পুজো নিয়ে। শুধুমাত্র গ্রামের মানুষ নন আশেপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকেও মানুষের ঢল নামে পুজোর কদিন এই রায়চৌধুরী জমিদার বাড়িতে। প্রত্যেকটি পুজোর মতো এখানেও ষষ্ঠীর দিন সকালে ত্রয়ী উমাকে তিনটি বেদীতে স্থাপন করা হওয়ার পর তিনজন পুরোহিত গ্রামের পুকুর থেকে তিনটি ঘট ভরে তিনটি ঢাক সহযোগে তিন দেবীর আরাধনার সূচনা করেন।
এরপর সপ্তমী,সন্ধিপূজো ও নবমীতেও চলে দেবীর আরাধনা। নবমীতে দেবীর উদ্দেশ্যে ছাগ বলি দেওয়া হয় বলেই জানা গেছে। তবে চতুর্ভূজা উমার পুজোতে থাকেনা কোনো অন্যভোগ। নবমীর পর দশমীতে সিঁদুর খেলায় মাতেন গ্রামের সমস্ত ত্রয়স্ত্রী। সবশেষে বিকেলে গ্রামের দিঘীতে তিন উমাকে একসঙ্গে বিসর্জন দেওয়া হয়। পুজোর এই কটা দিন শুধুমাত্র মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষ নন আশেপাশের জেলাগুলি থেকেও মানুষের ভিড় জমে এই পশলা গ্রামে চতুর্ভুজা উমা দর্শনের উদ্দেশ্যে।