শ্যামাপূজা প্রায় আসন্ন । চারিদিকে পূজার তোড়জোড় এগিয়ে চলেছে জোর কদমে । আজকের কাহিনীর সূত্রপাত প্রায় সাড়ে তিনশো চারশো বছর আগে । পটভূমি ভাগীরথী তীরবর্তী জয়নগর মজিলপুর।শোনা যায় ভৈরবানন্দ নামের এক তন্ত্রসাধক স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে পদ্মপুকুর নামের এক জলাশয় থেকে খুঁজে পান ৩০০ বছরেরও পুরনো দেবী বিগ্রহ। তার নির্মিত পর্ণ কুটিরেই স্থাপনা করেন দেবীর , তিনিই হলেন দেবী ধন্বন্তরী।
পরবর্তী কালে এই তন্ত্র সাধকের সংস্পর্শে আসেন মজিলপুরের ঠাকুরবাড়ির আদিপুরুষ রাজেন্দ্রলাল চক্রবর্তী । লোকমুখে শোনা যায় যে মা তাকে স্বপ্নে দেখা দেন এবং আদেশ দেন পুকুরের কাছে পড়ে থাকা একটি নিম কাঠ থেকে দেবী বিগ্রহ নির্মাণ ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করার।
সেই থেকে আজ পর্যন্ত সেই নিম কাঠের বিগ্রহ পূজিতা হয়ে আসছে । বর্তমানে অনেক বড় হয়েছে মন্দির প্রাঙ্গণ ।এও কথিত আছে যে মায়ের স্বপ্নে নির্দিষ্ট একটি ওষুধে নাকি হত রোগ নিরাময় ।
তাই তাকে ডাকা হয় ধন্বন্তরী মা কালী নামে । এই দেবী অত্যন্ত জাগ্রত, শনি মঙ্গল বার বিশেষ পুজোয় অগণিত ভক্ত সমাগম হয় মন্দির প্রাঙ্গণে । কালীপুজোর দিনও আয়োজন করা হয় বিশেষ পুজোর ।
বিশেষত্ব :
তবে প্রতি বছর বৈশাখ মাসের প্রতিপদ থেকে পূর্নিমা পর্যন্ত এক পক্ষকাল বা ১৫ দিন ধরে এই রূপ পরিবর্তন ও বিশাল মেলা । এই পুজোর বিশেষত্ব হলো ১৫ দিন ভিন্ন ভিন্ন পোশাক ও সজ্জা পরিবর্তন করা হয় এবং সেই সঙ্গে মেলা হয় মন্দির প্রাঙ্গণে , যা বেশের মেলা নামে বিশেষ খ্যাত ।
দীর্ঘ ১৫ দিন ব্যাপী ভিন্ন ভিন্ন রূপে পূজিতা হন দেবী । প্রতিপদে তিনি পূজিতা হন কৌমরী রূপে , দ্বিতীয়াতে বিপদত্তারিনী রূপে , তৃতীয়াতে ভুবনেশ্বরী রূপে,চতুর্থীতে গণেশ জননী রূপে, পঞ্চমীতে কৃষ্ণকালী রূপে , ষষ্ঠীতে বারাহী,সপ্তমী নরসিংহী,অষ্টমী সঙ্কটাকালী,নবমী জগদ্ধাত্রী ,দশমীতে আহ্নবী , একাদশীতে অন্নপূর্ণা , দ্বাদশীতে কালিয়াদমন , ত্রয়োদশীতে ইন্দ্রানী , চতুর্দশীতে দক্ষিণাকালী , পূর্ণিমাতে ষোড়শী এই ষোড়শী রূপটি তিন দিন থাকে।