উত্তর কলকাতার প্রসিদ্ধ বড়ুয়া এন্ড দে”- র মাটন প্যান্থেরাস এর ইতিবৃত্ত
উত্তর কলকাতা মানে বনেদিয়ানা, সাবেকিয়ানা। উত্তর কলকাতা মানে প্রাচীনত্ব, আভিজাত্য। উত্তর কলকাতার অলিগলি মানেই যেমন থিয়েটার পাড়া , রাজবাড়ি, আদি হরিদাস মোদক, নবীন ময়রার রসগোল্লা, তেমনি ভোজনরসিকদের ভোজনের আস্বাদ মেটাতে উত্তর কলকাতার প্রসিদ্ধ “বড়ুয়া এন্ড দে”- র মাটন প্যান্থেরাস।
শতাব্দী প্রাচীন সেই বড়ুয়া অ্যান্ড দে এর দোকান |
স্বাধীনতার পূর্বে প্রতিষ্ঠিত দীর্ঘ অষ্ট আশি বছরের প্রাচীন এই রেস্টুরেন্টটি আজও উত্তর কলকাতায় স্বমহিমায় ভোজন রসিকদের স্বাদের আহ্লাদ মিটিয়ে যাচ্ছে। প্যান্থেরাস নামটা শুনে বন্য জন্তু মনে হলেও আসলে এই প্যান্থেরাস হল একটি বিশেষ উপাদেয় খাবার। মাটন বা চিকেন এর একটি রেসিপি, যেটা দেখতে অনেকটা কাটলেট এর মত মনে হলেও কিন্তু স্বাদে পুরোপুরি ভিন্ন ।
প্যান্থেরাস এর রেসিপিটি বাংলাদেশের চিটাগাং থেকে মগকুকরা কলকাতায় আনেন। এবার হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এই মগকুকরা তো বাংলাদেশি তাহলে এদের সাথে ব্রিটিশ খাবারের সম্পর্কটা কী? আসলে এই মগকুকদের ব্রিটিশ খাবার রান্না করা শেখায় ব্রিটিশ মেম সাহেবেরা। চিটাগং থেকে মগ কুকদের নিয়ে আসা হয় উত্তর কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়িতে। কারণ সেই সময়ে শোভাবাজার রাজবাড়িতে প্রচুর ব্রিটিশ সাহেবের আনাগোনা ছিল। তাদের খাতির ও তোষামোদের জন্য বিভিন্ন ব্রিটিশ উপাদেয় খাবার খাওয়ানো হতো ।সেই খাবারে তালিকার মধ্যে অন্যতম ছিল কাটলেট কভারেজ বা কবিরাজি এবং মটন প্যান্থেরাস।সমস্ত উত্তর কলকাতা ঘুরলে হাতে গোনা মাত্র দুটো দোকানেই প্যান্থেরাসের দেখা মিলবে একটি রিংমো ,যেটি শোভাবাজারের কুমারটুলির কাছে অবস্থিত এবং অন্যটি সবথেকে প্রসিদ্ধ ৮৮ বছরের প্রাচীন বড়ুয়া এন্ড দে ফাস্ট ফুড সেন্টার।
এবারে জেনেনিন কিভাবে পৌঁছাবেন বড়ুয়া এন্ড দে ফাস্টফুড সেন্টারে,শ্যামবাজারে মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজ এর উল্টো দিকে শ্যামবাজার মেট্রো স্টেশনের চতুর্থ দ্বারে এসে ঠিক তার বাম দিকে কিছুটা এগিয়ে গেলেই গৌরি মাতা সরণি, সরু গলি বরাবর কয়েক পা এগোলেই আপনার ডান দিকে একটা গলি আসবে গলি বরাবর একটু এগিয়ে গেলেই রাস্তার শেষ প্রান্তে ডান দিকে তাকালেই দেখতে পাবেন প্রাচীন বড়ুয়া এন্ড দে ফাস্টফুড সেন্টার।
উত্তর কলকাতার ঐতিহ্য বড়ুয়াএন্ড দে ফাস্ট ফুড সেন্টারের অতীত অনেকেরই অজানা। এই রেষ্টুরেন্টের বর্তমান কর্ণধার রাজু বড়ুয়া এবং জয়দেব দে। রাজু বড়ুয়ার দাদু গ্রেট ইস্টার্নে কাজ করতেন এবং ওনার দাদুর জেঠুরা কাজ করতেন শোভাবাজার রাজবাড়িতে ওনারা ছিলেন রাজবাড়ীর মগকুক। রাজু বড়ুয়ার ঠাকুরদার নকুর বড়ুয়াকে গ্রেট ইস্টার্ন থেকে বিপ্লবী বারীন ঘোষ ডেকে নিয়ে আসেন এবং শ্যামবাজারের কাছে সাহেবদের একটি ক্লাব ছিল , থেটাফেটা ক্লাব সেখানে রান্না করার কথা বলেন। সেখানে ব্রিটিশ বাবুদের জন্য রান্না হতো প্যান্থেরাস, কাটলেট, কবিরাজি। ব্রিটিশ সাহেবদের খাবার পর যা অবশিষ্ট থাকতো তা বিক্রি হতো সাধারণ মানুষদের জন্য। এর কিছুদিন পরে যখন থেটাফেটা ক্লাব উঠে যায় তখন উনি পাকাপাকিভাবে এটি দোকান শুরু করেন, তারপর তার ছেলে অর্থাৎ রাজু বড়ুয়ার বাবা বিধুভূষণ বড়ুয়া এই দোকানটি চালানো শুরু করেন। এই দোকানটি আর এক নামে প্রসিদ্ধ তাহলো মামার দোকান। শুধুমাত্র প্যান্থেরাসই নয় এই রেস্টুরেন্টের চিকেন ফ্রাইও খুব প্রসিদ্ধ। তাই আজ ই একবার ঘুরে আসুন বড়ুয়া এন্ড দে ফাস্ট ফুড সেন্টারে।