তিনি উপলব্ধি করলেন যে জাতির নারীরা অশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত সে জাতির উন্নতি সম্ভব নয় এবং সেই সঙ্গে বুঝলেন এ দেশের মানুষের ইংরেজী শিক্ষার প্রয়োজন , সেই সাথে প্রয়োজন জাতিভেদ প্রথা ভুলে এগিয়ে যাওয়ার।সমাজের বহু গণ্য মান্য ব্যাক্তির প্রচণ্ড অসহযোগিতা সত্বেও এগিয়ে গেছিলেন তিনি , একা। কোনো ব্যঙ্গ বিদ্রুপ , পক্ষির গান , তামাশা , কিছুই বাধা হয়ে দাড়ায়নি তার পথে ।
কিভাবে সেই অসম সাহসী মানুষটি ব্রাহ্মণ হয়েও সামাজিক কুপ্রথাগুলির বিরুদ্ধে একা লড়াই করেছেন সে সব গল্পই আমরা জানি । তবে যেটা জানিনা সেটা হলো ঈশ্বরচনদ্রের শুধু নাম ই ঈশ্বর ছিলনা , এই বঙ্গভূমির বহু মানুষের কাছে তিনি ছিলেন প্রকৃতই ঈশ্বর। কত মেয়ে যে নতুন জীবন পেয়েছে তার হাত ধরে , কত মেয়ে শিখেছে বাঁচতে , স্বপ্ন দেখতে তা বোধহয় আমরা গুনে শেষ করতে পারবো না। শুধু মেয়েরাই নয় তার সাহায্য পেয়েছে বহু অসহায় পরিবার , ছাত্র। কোনো মানুষ , পড়াশোনা করতে চায় অথচ অর্থাভাবে হয় উঠছে না তার জন্য যেমন আছেন তিনি , তেমনই কোনো পরিবার অনাহারের শিকার তার সাহায্যপ্রার্থী তার জন্য ও তিনি সমান ভাবে আছেন। শোনা যায় ধার করে , নিজে অন্নভাবে থেকে হলেও মানুষের দুর্দশা ঘোচাতেন তিনি ।তবে জীবনের শেষ পর্ব তিনি কাটিয়েছিলেন সাঁওতাল পরগনার কর্মাটারে। যে সাঁওতাল পরগনার মানুষের কাছে তিনি ছিলেন প্রকৃতই ঈশ্বর। যারা বিশ্বাস করতো তাদের অন্নহিন , বস্ত্রহীন , দরিদ্র জীবনে এই মানুষটা এসেছে তাদের রক্ষা করতে । সেই গ্রামে বিদ্যাসাগরের কাটানো শেষ ১৭ বছরের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িতে সর্বত্র তিনি আজও বিরাজ করেন ঈশ্বর হয়েই ।