রূপম মিস্ত্রী : গতকাল ছিল ২ অক্টোবর ,জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন ।অজানা নয় আমাদের কারোর কাছেই । এ বাংলায় এক সময় গান্ধীজীর স্থায়ী ঠিকানা ছিল সোদপুরের খাদি প্রতিষ্ঠান । ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ২ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় এই খাদি প্রতিষ্ঠান ।স্বয়ং গান্ধীজীর চেষ্টায় শুরু হয় এখানে খাদি গ্রাম উদ্যোগ ।তিনি মাঝে মাঝে এখানে এসে থাকতেন এবং নিজেই চরকায় সুতো কেটে তৈরি করতেন খাদি । পরবর্তীকালে তিনি এখানে ১৯৩৯,১৯৪৫,১৯৪৬ ,১৯৪৭ সালেও এসেছেন এবং ৬-৭ সপ্তাহ থেকেছেন । ভারত সরকার দ্বারা এটাকে হেরিটেজ হিসেবেও ঘোষিত করা হয়েছে।
বর্তমানে কি অবস্থা তার? দীর্ঘদিন নেই কোনোরকম দেখভাল ,অযত্নে এক কোনায় পড়ে রয়েছে এই ঐতিহাসিক স্থান। কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যে আসেন, অফিস খোলেন খানিকক্ষণ থাকেন তারপরে আবার চলে যান নিজের মত। কোন রকম পরিচর্যা কিংবা যত্নের বালাই নেই।
নিয়ম মত প্রত্যেক দিন সকাল দশটা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত খোলা থাকার কথা এই মিউজিয়াম। কিন্তু কোথায় কি? প্রতিদিন খোলা হয় না বাপুর কক্ষটি ।বারান্দাতেই ঘুরেফিরে চলে যায় দেখতে আসা মানুষেরা । বছরে বিশেষ কিছু দিনে খোলা হয় বাপুর কক্ষ। যেমন ২রা অক্টোবর তো অবশ্যই ,তবে তাও মাত্র সকালে কয়েক ঘণ্টার জন্য । কি কি রয়েছে তার ঘরের ভিতরে ? রয়েছে তার ব্যবহার করার চরকা একটি খাট এবং অন্যান্য টুকিটাকি জিনিসপত্র। তাছাড়া বেশ কিছু ছবি ।অযত্নে ধুলো পড়েছে গান্ধীজীর ব্যবহার করা চরকার উপরে এবং অন্যান্য জিনিসপত্রেও । একসময় এই ঘরে বসেই চরকা কাটতেন গান্ধীজি । খাদি ভবনের বারান্দায় দেয়ালের গায়ে বিভিন্ন ব্যানারে লেখা রয়েছে এখানকার নানান স্মৃতি, ঘটনার কথা ।তবে তা পড়বার উপায় নেই । ছবিও রয়েছে বেশ কিছু। তবে সব ব্যানার ধুলোয় ঢেকে গিয়েছে। পড়তে গেলে হাত দিয়ে ধুলো মুছে তবে পড়তে হয় । বিভিন্ন ছবি অস্পষ্ট হয়েছে ধুলোর কারণেই ।কিছু ছবি দেখে আন্দাজ করা যায় যে বিভিন্ন সময়কার এই খাদি ভবনেরই বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন স্মৃতি বিভিন্ন ঘটনার কথাই সেসব ব্যানারে লেখা রয়েছে তবে কোন উপায়েই তা ভালোভাবে পড়া সম্ভব নয় ।
ঝড়ে পড়ছে দেয়ালের গা থেকে সিমেন্ট ।দরজা-জানলা সমস্ত কিছুর অবস্থাই বেহাল ।কিছু কিছু ঘরে বোঝাই করা রয়েছে ভাঙা জিনিসে। স্থানীয় বাসিন্দা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)তার কথায় "ঘরগুলোকে ভাগাড় করে রেখেছে" প্রায় ৬২ বছর তিনি রয়েছেন এই খাদি ভবনেরই প্রাঙ্গনে। "মাঝে মাঝে উদ্যোগ নেওয়া হয়, শুরু হয় খাদির কাজ ,তারপরে আবার খেয়াল-খুশি মতো বন্ধ হয়ে যায় সেসব ।" সমস্ত সরঞ্জাম যা দিয়ে কাজ করা হয়েছে বিভিন্ন সময়, সে সমস্ত ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে এরই দুটি ঘরে। প্রবল বৃষ্টিতে নাকি জলও পড়ে সমস্ত ঘরে। স্থানীয় সংসদ নাকি কথা দিয়েছেন যে তিনি সংস্কার করাবেন ।তবে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়া সত্বেও কোনরকম সংস্কার হয়নি। এ বছর গান্ধী জয়ন্তীও পালন হয় সকালবেলা গান্ধী মূর্তিতে মাল্যদান করে সামান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেই সমাপ্ত হয় গান্ধী জয়ন্তী। ভারত সরকার সারাদেশে স্বচ্ছ ভারতের ডাক দিলেও এই দিনেই ধুলিমালিপ্ত রয়ে গেল বাপুর স্মৃতির একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান।