বর্ধমানের এই বনেদি পরিবারে চারদিন ধরে পূজিতা হন দেবী লক্ষ্মী
মোনালিসা মাইতি: দূর্গা পূজা শেষ।মা দুর্গা বিদায় জানিয়ে রেখে গেলেন মা লক্ষ্মী। আজকের দিনে ঘরে ঘরে এবং মণ্ডপে মণ্ডপে পূজীত হবে ধনলক্ষ্মী দেবী। তবে বড়ো বড়ো মণ্ডপ গুলিতে দেখা যাবে নিয়মরক্ষার পূজো। বহু বাড়িতেই আজ লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা হবে ঘটা করে। এরই মাঝে বর্ধমান শহরে দেখা যায় বনেদিবাড়ির লক্ষ্মী পূজোয় মহা আয়োজন। বর্ধমান শহরের কুন্ডু পুকুর পাড় এলাকায় সিংহ বাড়ির সদস্যরা লক্ষ্মী পূজাকে সর্বজনীন পূজো করে তুলেছে। বিভিন্ন জাতির মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে এই পূজোয়। প্রায় কয়েকশোজন মানুষকে নিমন্ত্রণ জানিয়ে সর্বজনীন লক্ষী পূজোর নজর কেড়েছে এই সিংহ পরিবার।
প্রায় ৭১ বছর ধরে সিংহ পরিবার লক্ষী পূজোর রীতিকে বয়ে এনেছে । দুর্গাপূজার মতোই এই পরিবারে লক্ষ্মী পূজার আরাধনা হয় চার দিন। সেই জন্যেই প্রথম থেকেই এই বাড়ির লক্ষ্মী পূজো সর্বজনীন তকমা পেয়ে এসেছে। এই পূজো প্রথম শুরু করেছিলেন কালীপদ সিংহ। বর্তমানে তার নাতি অজিত সিংহ লক্ষ্মী পূজোর পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন। অজিত সিংহের কথায় কালীপদ সিংহের বাড়ি ছিল বাঁকুড়া জেলার সোনামুখীতে। পরবর্তীকালে তিনি বর্ধমান জেলার এই কুন্ডু পুকুর পাড় এলাকায় চলে আসেন এবং সবাইকে নিয়ে শুরু করেন চার দিনের লক্ষী পূজা।সেই রীতিকে মেনে সিংহ পরিবারের এই লক্ষী পূজোয় আমন্ত্রিত থাকে বহু মানুষজন।
দেখা যায় কালীপদ সিংহের মৃত্যুর পর তার তিন ছেলে রবি কর দিবাকর ও তারক সিংহ মিলিত হয়ে এই পুজোর দায়িত্বে ছিলেন। পরিবারের সদস্যের থেকে জানা যায় এই লক্ষ্মীপুজোর পরেই তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। যতদিন গেছে এই পূজার আয়োজন বাড়িয়ে গেছে সিংহ পরিবার। এই তিন পুরুষের জন্য কালিপদ সিংহের নাতি অজিত সিংহ তার স্ত্রী তাপসী সিংহ তার দুই পুত্র সুকান্ত ও সুশান্ত সিংহ এবং পুত্রবধূ সুপর্ণা সিংহ ও সোনালী সিংহ সমানভাবে পরিশ্রম করে এই পুজোর রীতিকে বজায় রেখে অতিথিদের আপ্যায়ন করেছেন। সবাই একত্র হয়ে এই লক্ষী দেবীর পূজোকে সর্বজনীন পুজো করে তুলেছেন। বহু আগে গুটিকয়েক মানুষকে অন্ন ভোগ দেওয়া হত ,আর এখন কয়েকশোজন মানুষ এই অন্নভোগে অংশগ্রহণ করেন সিংহ পরিবারের পূজো উপলক্ষে। থাকেনা কোনো জাতপাতের ভেদাভদ। দূর্গা পূজার মতোই সিঁদুর খেলা এবং বিসর্জন দিয়েই শেষ হয় এই বাড়ির লক্ষী পূজো। পূজোর চার পাঁচ দিন বিভিন্ন জেলা থেকে বহু মানুষ আসেন সিংহ পরিবারের পূজায় অংশগ্রহণ করতে। তাই এই বাড়ির পূজো প্রতিবছরই জমজমাট হয়ে থাকে এবং তৈরী করে আনন্দের উৎসব।