এবার ইউনেস্কোর দরবারে " রাস্তার মাস্টার " দীপনারায়ণ । বিশ্বের সেরা ১০ শিক্ষকের তালিকায় রাস্তার মাস্টার ,দীপনারায়ণ
শিলা রাজবংশী : " রাস্তার মাস্টার " শুনে মনে হতে পারে এ আবার কেমন মাস্টার ? হ্যাঁ, এ এমনই এক মাস্টার যে আমাদের সবার থেকে আলাদা । ইনি হলেন আসানসোলের জামুরিয়া তিলকা মাঝি আদিবাসী ফ্রী প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক দীপনারায়ণ ।
যখন করোনার ভুরুকুটিতে বিশ্ববাসী দিশেহারা । তখনই এই মানুষটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো বিস্তারে অকপট ।
সেই সময় স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে গেলে , চালু হয় অনলাইন পাঠদান ব্যবস্থা । সরকার দশম শ্রেণীর পর ছাত্র-ছাত্রীদের মুঠোফোন বা ট্যাবের ব্যবস্থা করলেও বাকি শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সেই ব্যবস্থা করেননি।
আমাদের দেশের এমন বহু অঞ্চল আছে যেখানে সাধারণ মানুষের কাছে মুঠোফোনটি ও নেই । স্মার্ট ফোন তো দূরের কথা ।
যাদের ও বা আছে তাদের নেট ব্যালেন্সের টাকা জোগাড় বড়ই কষ্টসাধ্য ।
তাদেরই মুশকিল আসান হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্বীপনারায়ন ।
তিনি খোলা আকাশের নিচে মাটির রাস্তায় বসে পড়াতে শুরু করেন আদিবাসী সমাজের শিশুদের ।
শুধু প্রথাগত শিক্ষা নয়, জীবনের পাঠ দানও দিচ্ছেন তিনি ।
মাটির দেয়ালকে বোর্ড বানিয়ে তাতেই অ ,আ, ক ,খ A, B, C ,D অংক নামতা ইত্যাদির পাঠদান দিয়ে থাকেন ।
শুধু যে শিশুদেরই পাঠদান দিচ্ছেন তা নয় , তাদেরই সাহায্য নিয়ে তাদের বাবা-মা দাদু ঠাকুমাদেরও পাঠদান দিচ্ছেন ।
সূত্র মারফত খবর : রীতিমত ছেলে মেয়ের সঙ্গে বাবা মায়ের বা দাদু ঠাকুমার সাথে নাতি নাতনিদের মধ্যে একটা কম্পিটিশন হয়ে যায় পাঠদানের সময় । কে কার আগে পড়া দেবে , কে কার আগে লেখা জমা দেবে এই নিয়ে । তাদের এই মুখরিত ধ্বনিতে চারদিক হয়ে ওঠে প্রাণোচ্ছল ।
যাদের পড়াশোনাতে অনীহা তারাও এই পাঠশালা দেখে পড়ায় আগ্রহী হবেন । এখানে একে অপরে পড়াশোনার পাশাপাশি আনন্দ ভাগ করে নেই । এছাড়াও আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি চালু করেছেন গ্রাম্য লাইব্রেরী ।
তাছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক মূলক , গঠনমূলক , সচেতন মূলক কাজ করে থাকেন । তিনি সেখানকার মানুষকে করেছেন কুসংস্কার বিমুখ । যেখানে ম্যালেরিয়া হলেও ভূতে ধরাকে বিশ্বাস করে সেই সমাজ তারই হাত ধরে নিয়েছে করোনা ভ্যাকসিন ।
তিনি যেন এ যুগের বিদ্যাসাগর । পিছিয়ে পড়া প্রতিটি সমাজের এমন একটা করে দ্বীপনারায়ণের প্রয়োজন আছে ।
আজ তারই জন্য গোটা একটা গ্রাম সৃষ্টি হয়েছে মস্ত এক পাঠশালায় ।
এছাড়াও তিনি নজর দিয়েছেন সেখানকার মানুষের সুস্বাস্থ্যের দিকে ।
সেখানকার প্রত্যেকটা মানুষ দ্বীপনারায়ণ কে পেয়ে খুবই ভাগ্যবান মনে করেন ।
সূত্র মারফত খবর : ইউনেস্কোর আয়োজিত " গ্লোবাল টিচার প্রাইজ " এ ১৩০ টি দেশকে পিছিয়ে সেরা ১০ এ জায়গা করে নিয়েছে " রাস্তার মাস্টার " দ্বীপনারায়ন । যার পুরস্কার মূল্য ১ মিলিয়ন ডলার ( ভারতীয় মুদ্রায় ৮ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা ) অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হবে ৮ ই নভেম্বর ।
তিনি তারা সাফল্য ভাগ করে নিয়েছেন তার পড়ুয়াদের সাথে , তারা পাশে থাকা সকল মানুষের সাথে । এরই সঙ্গে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভার্কি ফাউন্ডেশন , ইউনেস্কো এবং দুবাইয়ের কেয়ারসকে।
সারা বিশ্বের কাছে ভারতের নাম উজ্জ্বল করলেন ভারতের গর্ব দ্বীপনারায়ণ । তিনি বহু মানুষের কাছে আইডল । নতুন প্রজন্ম তাকে অনুসরণ করে , তার দেখা পথ ধরে পিছিয়ে পড়া মানুষ , পিছিয়ে পড়া সমাজকে এমনই ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে । একদিন ভারতের প্রকৃত ও প্রথাগত শিক্ষার হার হবে ১০০ শতাংশ ।