শিলা রাজবংশী : দীর্ঘ জল্পনার অবসান , অবশেষে পৌষ মেলা হচ্ছে বিশ্বভারতীর মাঠেই । ইতিমধ্যে বিশ্বভারতীর এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকেই আবার পৌষ মেলা চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ।
তবে এ মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই কিছু বিধি নিষেধ লাঘু করা হয়েছে । সেই বিধি-নিষেধ মেনেই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে পৌষ মেলা ।
২০১৯ সালে পূর্বপল্লীর মাঠে শেষবারের মত অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা । যা কিনা আনুষ্ঠিত হয়েছিল শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লীর মাঠে ।
সে বছর দূষণবিধি না মানায় বিশ্বভারতীকে কোর্টের দ্বারস্থ পর্যন্ত হতে হয়। এমনকি জরিমানাও দিতে হয়েছিল বিশ্বভারতীকে ।
ফলে তিক্ততা নিয়েই তৎকালীন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী পৌষ মেলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন ।
সর্বপ্রথম পৌষ মেলাটি শুরু করেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর যিনি কিনা বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতা এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা । বাংলা মাসের পৌষ এর সপ্তম দিনে ( ফসল কাটার মরশুমে ) অনুষ্ঠিত হয় এই মেলাটি । ইংরেজী মাসে যা কিনা পড়ে ডিসেম্বরের শেষের দিকে । ১৯৮৪ সালে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলার হস্তশিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রদর্শনের জন্য আয়োজন করেছিলেন এই অনুষ্ঠানটি।
গত ৮ ই নভেম্বর বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে । অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে এখন দায়িত্বে রয়েছেন কলাভবনের অধ্যাপক সঞ্জয় মল্লিক ।
বিশ্বভারতীর অন্যতম দুটি বড় উৎসবের মধ্যে একটি হচ্ছে পৌষ মেলা এবং অপরটি হচ্ছে বসন্ত উৎসব । গত তিন বছর ধরেই পৌষ মেলাটি বন্ধ থাকার ফলে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা ভীষন ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছেন । মেলার দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতেও শুরু করেন তারা ।
সর্বশেষে প্রশাসনকে পৌষ মেলার জন্য মাঠ দিতে সম্মতি দিলেন বিশ্বভারতী ।
ইতিপূর্বে বিশ্বভারতীর কাছে পূর্বপল্লীর মাঠের জন্য আবেদন জানান রাজ্য ।
২০১৯ এর তিক্ত অভিজ্ঞতার জন্য এ বছর ১৩ টি শর্ত আরোপ করে বিশ্বভারতী ।
শর্তগুলো :
১. গ্রীন ট্রাইবুলান বিশ্বভারতীর প্রাঙ্গণে পৌষ মেলা আয়োজন নিয়ে যে বিধি নিষেধ দিয়েছেন তা রক্ষা করা সম্ভব কিনা ।
২. যেহেতু এবছর বিশ্বভারতী এবং শান্তিনকেতন ট্রাস্ট পৌষ মেলার আয়োজনে থাকছেন না । বোলপুর মহকুমা প্রশাসনের দ্বারাই আয়োজিত হচ্ছে পৌষ মেলাটিতে । মেলায় এবার কোন আইনি জটিলতা হলে তার দায়িত্ব জেলা প্রশাসন নেবেন কিনা ।
৩. বিশ্বভারতীর সাংস্কৃতিক , নান্দনিক রুচিবোধ রেখে মেলা অনুষ্ঠানটি করা যাবে কিনা
৪. গ্রীন ট্রাইবুলারের নির্দেশিত সময়ের মধ্যে মেলা শেষ করে এবং মাঠ পরিষ্কার করে মহকুমা প্রশাসন বিশ্বভারতীকে পূর্ব অবস্থায় মাঠটি ফেরত দিতে পারবেন কিনা ।
৫. মেলা সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয় বোলপুর মহকুমা প্রশাসন বহন করতে পারবেন কিনা ।
৬. মেলা চলাকালীন বিশ্বভারতীর ছাত্র-ছাত্রী ও অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের সামগ্রিক নিরাপত্তা এবং তাদের পঠন-পাঠনের পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে পারবেন কিনা।
বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে এরকম আরো কিছু শর্ত রাখা হয়।
বোলপুরের মহকুমা শাসক অয়ননাথ 12 টি শর্ত পূরণে আশ্বাস দিয়ে রবিবারের চিঠির উত্তর দেন । যদিও ফৌজদারি মামলার নিষ্পত্তির শর্ত বিশ্বভারতী দিয়েছিল তা বিচারাধীন বলে জানিয়ে দেন রাজ্য প্রশাসন ।
চিঠির উত্তর পেয়ে বিশ্বভারতী সোমবার জরুরী বৈঠকে বসেন ।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রাজ্য প্রশাসনকে মেলা করার জন্য মাঠ দেবেন বিশ্বভারতী ।
বিশ্বভারতীর কর্মসচিব অশোক মেহেতা সেদিন জানিয়ে দেন শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লীর মাঠে পৌষ মেলা নিয়ে আর কোন আপত্তি নেই । উভয়ই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ।
পৌষ মেলা এবার রূপ নিতে চলেছেন মিলন মেলার ।
দীর্ঘ তিন বছরের তিক্ততার অবসান হতে চলেছে পৌষ মেলার হাত ধরে । খুশির হাওয়া বইছে শান্তিনিকেতনে । তাই আনন্দে আত্মহারা বোলপুর বাসি ।